মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত অনুসন্ধানে জরিপের অংশ হিসেবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটির গভীরে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। ড্রিলিংয়ের (খনন) পর মাটির ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে এসব বিস্ফোরণের কারণে পাকা ও আধাপাকা ঘরবাড়িতে বারবার হচ্ছে কম্পন।
এতে শিশু ও অসুস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। বিস্ফোরণের ফলে নলকূপে পানি ওঠাতে সমস্যা ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রাম ঘিরে গত দুদিন ধরে এসব বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
তবে বসতবাড়ি থেকে কমপক্ষে ৮০-১০০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা থাকলেও সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, কোনো কোনো সময় বাড়ির আঙ্গিনায়ও বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
জানা গেছে, গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার অংশ হিসেবে কমলগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে ড্রিলিং করে মাটির গভীরে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
এতে অসুস্থ রোগী ও শিশুরা আতঙ্কিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমি বিনষ্ট, মাটিধস, পাকা দেয়ালে ফাটল, নলকূপে পানি উঠতে সমস্যা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসহ সর্বোপরি ভূমিকম্পের সময়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
শমসেরনগরের দেওছড়া চা বাগানের বাসিন্দা রাজু গৌড় অভিযোগ করে বলেন, ‘বিস্ফোরণের কারণে আমার ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। একইভাবে এই চা বাগানে আরও অনেক শ্রমিকের পুরাতন মাটির ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিচ্ছে। ’
পতনঊষারের শ্রীসূর্য গ্রামের সমাজকর্মী ফটিকুল ইসলাম এবং ধূপাটিলা গ্রামের সায়েদ মিয়া, আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী ও আতিকুর রহমান অভিযোগ করেন, বেশ কিছুদিন ধরে সিএনপিসির কর্মীরা দল বেঁধে কাজের কারণে তাদের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এখন বাড়িঘরের আশপাশে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে, তাতে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে পরিবারের শিশু ও অসুস্থ সদস্যদের মধ্যে বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এভাবে গ্রামের ভেতরে টানা বিস্ফোরণ ঘটানো অনুচিত বলে উল্লেখ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ রক্ষাকর্মী নুরুল মোহাইমীন মিল্টন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বসতবাড়ির আশপাশে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে, তাতে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না; এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়েও দাঁড়াবে। দিনে শতাধিক বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে মাটির স্তর পরিবর্তন, পানিদূষণ, নলকূপে পানি ওঠাতে সমস্যা এবং বন্যা ও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি, মাটি ধসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। ’
তবে ড্রিলিং কাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমাম হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধায়নে আমাদের সার্ভে কাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতিসাপেক্ষে সার্ভে ও ড্রিলিং কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের ২০টিসহ সারা দেশে ৪৯টি চা বাগানে কাজ করারও অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে যদি কারও ফসলের কিংবা বাড়িঘরের কোনো ধরনের ক্ষতি হয়, তবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ’
এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারা (সিএনপিসি) সার্ভে শুরু করেছে। তবে বসতবাড়ি থেকে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা রয়েছে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ’